আজ, সোমবার | ১৩ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ভোর ৫:৪৬

ব্রেকিং নিউজ :
মাগুরা শহরে চারতলা ভবন থেকে লাফিয়ে অকৃতকার্য পরীক্ষার্থীর আত্মহত্যা! আবারো সিআইপি সম্মাননা পেলেন বিজনেস আইকন মাগুরার আব্দুল মুক্তাদির শ্রীকোলের ১০টি কেন্দ্রে শাহীনের ভোট মাত্র ১৬৪টি! শ্রীপুর উপজেলায় নির্বাচিত চেয়ারম্যান রাজন ৪৩টি কেন্দ্রে প্রথম হয়েছেন বোনের বাড়িতে গিয়ে মাগুরা সরকারি কলেজ শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা মাগুরা সদর উপজেলায় রানা শ্রীপুরে রাজন নির্বাচিত মাগুরা সদর ও শ্রীপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রস্তুতি সম্পন্ন উপজেলা চেয়ারম্যান পদে মাগুরা সদরে রানা ও শ্রীপুরে রাজনের দিকেই সবার নজর মাগুরায় ঋষিপাড়ার সদস্যদের মধ্যে কৃষিব্যাংকের সহজশর্তে ঋণ বিতরণ মাগুরায় রানাকে সমর্থন দিয়ে নির্বাচন ছাড়লেন ভিপি জাহাঙ্গীর

জাতির শোকের দিন পনের আগস্ট

মাগুরা প্রতিদিন ডটকম : শোকাবহ ১৫ আগস্ট। জাতির ইতিহাসে সবচেয়ে কলঙ্কিত দিন। জাতীয় শোক দিবস আজ। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৩তম শাহাদাতবার্ষিকী। ১৯৭৫ সালের এই দিন জাতি হারিয়েছে তার গর্ব, আবহমান বাংলা ও বাঙালির আরাধ্য পুরুষ, স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। এ দিনে বাঙালি জাতির ইতিহাসে কলঙ্ক লেপন করেছিল সেনাবাহিনীর কিছু বিপথগামী কর্মকর্তা আর ক্ষমতালিপ্সু কতিপয় রাজনীতিক। রাজনীতির সঙ্গে সামান্যতম সম্পৃক্ততা না থাকা সত্ত্বেও বঙ্গবন্ধু পরিবারের নারী-শিশুরাও সেদিন রেহাই পায়নি ঘৃণ্য কাপুরুষ এই ঘাতকচক্রের হাত থেকে। সেদিন বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আরও প্রাণ হারান তার সহধর্মিণী, তিন ছেলেসহ পরিবারের ১৮ জন সদস্য। বিদেশে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। জনমানস থেকে নিশ্চিহ্ন করার লক্ষ্যে ঘাতকরা ৪৩ বছর আগে যাকে হত্যা করেছিল, বাঙালির হৃদয়ে অবিনাশী হয়ে আছেন। দেশবাসী জাতীয় শোক দিবস পালনের মাধ্যমে, নানা কর্মসূচির পর্যায়ে তাকে স্মরণ করে। শ্রদ্ধা জানায়। রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দিনটি পালনে দেশজুড়ে আজ নানা কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। আজ সরকারি ছুটি। জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ পৃথক বাণী দিয়েছেন। এসব বাণীতে ১৫ আগস্টে শাহাদাতবরণকারী জাতির পিতা ও তার পরিবারের সদস্যদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। আজ টুঙ্গিপাড়া বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে ও ঢাকায় ৩২ নম্বরে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণের মাধ্যমে জাতি গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করবে তার জনককে। রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দিবসটি পালনে সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি বেসরকারি পর্যায়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সংগঠন, প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করবে।

বঙ্গবন্ধুর নির্মম হত্যাকাণ্ডের দীর্ঘ ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করে কুখ্যাত ইনডেমনিটি আইন বাতিল করে। জাতির পিতা ও তার পরিবারবর্গের নিষ্ঠুর বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডের বিচারকার্য শুরু করে। ২০১০ সালের ২৭ জানুয়ারি দীর্ঘ ৩৪ বছরেরও বেশি সময় পর সেই কলঙ্ক থেকে জাতির দায়মুক্তি ঘটে। বঙ্গবন্ধু হত্যার চূড়ান্ত বিচারের রায় অনুযায়ী ওইদিন মধ্যরাতের পর পাঁচ খুনির ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে জাতির জনক হত্যা, ষড়যন্ত্র এবং অবৈধ ক্ষমতা দখলের ঘৃণ্য ও তমসাচ্ছন্ন অধ্যায়ের অবসান ঘটেছে। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে বাঙালির বিজয়ের অভিযাত্রাও আরেক ধাপ এগিয়েছে। বিদেশে পলাতক খুনিদের দেশে ফিরিয়ে এনে সর্বোচ্চ আদালতের রায় কার্যকরের প্রক্রিয়া এখনো অব্যাহত রয়েছে।

একাত্তরে পরাজিত শক্তি মুজিব দর্শন ও তার আদর্শে এতটাই ভীত ছিল যে, কাপুরুষোচিত আক্রমণ থেকে বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সদস্যরাও রেহাই পাননি। বঙ্গবন্ধুর দীর্ঘ সংগ্রামে যিনি ছায়ার মতো পাশে থেকে মনোবল দিয়েছেন, সেই সাহসিনী বঙ্গমাতা বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিবও ঘাতকদের কাছে প্রাণভিক্ষা চাননি। বরং মাথা উঁচু করে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গী হয়ে চলে গেলেন দেশের তরে। ঘাতকের বুলেট থেকে বঙ্গবন্ধুর তিন ছেলে মুক্তিযোদ্ধা শেখ কামাল, শেখ জামাল ও নিষ্পাপ শিশু শেখ রাসেলও রেহাই পাননি। বঙ্গবন্ধুর নিজের পছন্দের পুত্রবধূ সুলতানা কামাল দেশের একজন খ্যাতিমান ক্রীড়াবিদ এবং আরেক পুত্রবধূ রোজী জামালও শহীদ হয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর একমাত্র ভাই শেখ আবু নাসের পায়ের সমস্যা নিয়েও মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়েছিলেন। তার মতো শান্ত ও বিচক্ষণ প্রগতিশীল মানুষকেও ঘাতকরা হত্যা করেছে ওই রাতে। বঙ্গবন্ধুর ফোন পেয়ে তার জীবন বাঁচাতে ছুটে আসা রাষ্ট্রপতির সামরিক সচিব কর্নেল জামিল আহমেদ, এসবি অফিসার সিদ্দিকুর রহমান, সেনা সদস্য সৈয়দ মাহবুবুল হককেও ধানমন্ডির বাড়িতে হত্যা করা হয়। বঙ্গবন্ধুর ভাগনে যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলুল হক মণির বাসায় হামলা চালিয়ে তাকে তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আরজু মণি, বঙ্গবন্ধুর ভগ্নিপতি ও কৃষিমন্ত্রী আবদুর রব সেরনিয়াবাতের বাসায় হামলা করে সেরনিয়াবাত ও তার কন্যা বেবী, পুত্র আরিফ সেরনিয়াবাত, নাতি সুকান্ত বাবু, আবদুর রব সেরনিয়াবাতের বড় ভাইয়ের ছেলে সজীব সেরনিয়াবাত এবং এক আত্মীয় রেন্টু খানকে হত্যা করে ঘাতকরা। ঘাতকদের মূল টার্গেট ছিল, তারা বঙ্গবন্ধুসহ তার পুরো পরিবার ও নিকটাত্মীয় কাউকেই পৃথিবীতে জীবিত রাখবে না। সে অনুযায়ী সেদিন ওই ঘাতকরা ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়িতে হত্যার এক জঘন্য উল্লাসে মেতে উঠেছিল। হত্যা করেছিল বিভিন্ন ঘরে ও একাধিক বাড়ি থেকে বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবার এবং নিকটাত্মীয়সহ মোট ২৬ জনকে। জানা যায়, ১৫ আগস্ট কালরাতে খুনি মেজর ডালিম ও রিসালদার মোসলেমউদ্দিনের নেতৃত্বে প্রথমেই আক্রমণ করা হয় বঙ্গবন্ধুর ভগ্নিপতি ও কৃষিমন্ত্রী আবদুর রব সেরনিয়াবাত এবং ভাগনে শেখ ফজলুল হক মণির বাসায়। এরপর আক্রমণ করা হয় বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে। প্রথমেই খুনি বজলুল হুদা ব্রাশফায়ার করে হত্যা করে বঙ্গবন্ধুর ছেলে শেখ কামালকে। বাসার নিচতলা ও দোতলার সিঁড়ির মাঝামাঝিতে গুলি করে হত্যা করা হয় বঙ্গবন্ধুকে। বঙ্গবন্ধুর বুকে ও পেটে ১৮টি গুলি লাগে। নিথর দেহ পড়ে থাকে সিঁড়িতে। এরপর ধীরে ধীরে সবাইকে গুলি ও ব্রাশফায়ার করে হত্যা করা হয় বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিবসহ বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সদস্যদের। ঘাতকের হাত থেকে রেহাই পায়নি ১০ বছরের শিশু রাসেলও।

পরদিন ঢাকার স্টেশন কমান্ডার আবদুল হামিদ বঙ্গবন্ধুর লাশ ছাড়া ১৫ আগস্টে নিহতদের লাশ দাফন করেন। আবদুল হামিদ ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাসভবন থেকে কফিনে নিহতদের লাশ এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গ থেকে শেখ মণি ও আবদুর রব সেরনিয়াবাতের পরিবারের সদস্যদের লাশ সংগ্রহ করে বনানী কবরস্থানে দাফনের ব্যবস্থা করেন। বনানী কবরস্থানে সারিবদ্ধ কবরের মধ্যে প্রথমটি বেগম মুজিবের, দ্বিতীয়টি শেখ নাসেরের, এরপর শেখ কামাল, সুলতানা কামাল, শেখ জামাল, রোজী জামাল, শেখ রাসেল, ১৩ নম্বরটি শেখ মণির, ১৪ নম্বরটি আরজু মণির, ১৭ নম্বরটি সেরনিয়াবাতের আর বাকি কবরগুলো সেদিন এই তিন বাড়িতে যারা মারা গিয়েছিলেন তাদের। ১৬ আগস্ট বিমানবাহিনীর হেলিকপ্টারে করে বঙ্গবন্ধুর লাশ নিয়ে যাওয়া হয় টুঙ্গিপাড়ায়। সেখানে তাকে দাফন করা হয় তার বাবার কবরের পাশে। কিন্তু দাফনের আগে যে ধর্মীয় বিধিবিধান তা পালন না করেই লাশের সঙ্গে যাওয়া সেনা সদস্যরা জাতির পিতাকে কবরস্থ করতে আদেশ দেয়। কিন্তু স্থানীয় উপস্থিত ইমাম সাহেব ও অন্যান্য সবাই লাশ কবর দিতে অস্বীকৃতি জানালে বাধ্য হয়েই ঘাতকদের প্রতিনিধিরা মাত্র ১০ মিনিট সময় বেঁধে দেয়। ফলে একজন দৌড়ে গিয়ে পাশের মুদি দোকান থেকে একটা কাপড়কাচা সাবান নিয়ে এলে তা দিয়েই লাশের গোসল করানো হয়, সাদা পুরনো কাপড় দিয়ে কাফন বানানোর পর বঙ্গবন্ধুর লাশ সমাহিত করা হয়েছিল।

দিবসটি উপলক্ষে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও বেসরকারি ভবনসহ বিদেশে বাংলাদেশ মিশনসমূহে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে এবং আলোচনা সভার আয়োজন করা হবে। এছাড়া সকাল ১০ টায় জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে কালেক্টরেট প্রাঙ্গণ থেকে ৠালি নিয়ে নোমানি ময়দানে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে দেয়া হবে শ্রদ্ধাঞ্জলি ।

শেয়ার করুন...




©All rights reserved Magura Protidin. 2018-2022
IT & Technical Support : BS Technology